অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিমের করা বল ঘূর্ণি কব্জির মোঁচড়ে ঘুরিয়ে মেরেছিলেন চেতন শর্মা। সেই বল বাতাসে ভেসে যায় ডিপ মিডউইকেট অঞ্চলে। সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশি ফিল্ডার কালাম সিদ্দিকী। শূন্যে ভেসে আসা সেই বলটি তালুবন্দী করেন মাটিতে গড়িয়ে। আম্পায়ার আউট ইশারা দেওয়ার আগেই সবাই উল্লাসে মেতে উঠলো। গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি সমর্থকরা সবাই ফেটে পড়েন বাধ ভাঙা উচ্ছাসে। ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো যুব এশিয়া কাপের শিরোপা জয় নিশ্চিত করল জুনিয়র টাইগাররা।
যে জয়ে দুবাইয়ের উজ্জ্বল আকাশের নিচে নেমে এলো এক চমৎকার ক্রিকেট বিকেল। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দল গত আসরের আনন্দের স্মৃতি আবারও জীবন্ত করে তুললো, আগেরবার সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে তারা প্রথম শিরোপা জিতেছিল।
যদিও বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস দেখে শিরোপা জয়ের কোনো আভাস মেলেনি। উইকেট দেখে মনে হয়েছিল ২৩০-২৪০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করালে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। কিন্তু ফিফটিহীন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা ১৯৮ রানেই গুটিয়ে যান।
স্কোর বড় না হওয়াতে আশাটা ছেড়েই দিয়েছিলেন লাল সবুজের সমর্থকরা। কিন্তু জুনিয়র টাইগার বোলারদের তোপের মুখে দাঁড়াতেই পারেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। হতাশার হার নিয়ে তারা ছেড়েছেন মাঠ।
লড়াইটা ছিল অল্প পুঁজির, তাই বোলারদের বাড়তি দায়িত্ব নিতেই হত। সেই কাজে তারা পেয়েছেন দশে দশ। ইকবাল হোসেন ইমন, মারুফ মৃধা এবং আল ফাহাদ তিনজনই একে একে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ড্রেসিং রুমে ফিরতে বাধ্য করলেন। ইমনের নিখুঁত লাইন-লেন্থ, মারুফের বিচক্ষণ বোলিং এবং আল ফাহাদের গতির স্রোতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বারবার অস্থির হয়ে পড়েন। তাতে ফিকে হওয়া আশাটা ফের জাগ্রত হয়ে উঠেছিল।
ভারতীয় ওপেনার আইয়ুশ মাত্রেকে বোল্ড করে যার শুরুটা করেছিলেন পেসার আল ফাহাদ। তবে গলার কাঁটা হয়ে থাকা বৈভব সূর্যবংশী তখনও ছিলেন। তাকে ফেরাতেও বেশিক্ষণ সময় নেননি মারুফ মৃধা। ১৩ বছর বয়সী বৈভবকে (৯) ফিরিয়ে উদযাপনে সেই সিগনেচার পোজটি দেন মারুফ।
তারপরের গল্পটা শুধুই ইকবাল হোসেন ইমনের। তার নিখুঁত লাইন-লেন্থে একে একে ফেরাতে থাকেন কেপি কার্থিকেয়া, নিখিল কুমার ও হার্বানস পাঙ্গালিয়া। ৭ ওভারে ১ মেডেনসহ ২৪ রানে তিন উইকেট শিকার করেন ইকবাল। এমন পারফরম্যান্সে জিতে নেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।
তবে অষ্টম উইকেট জুটিতে আবার ভারত দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। এবার ত্রাতা হয়ে আসেন দলীয় অধিনায়ক ও অফ স্পিনার আজিজুল হাকিম তামিম। মাত্র ২.২ ওভার বল করে ১ মেডেন নিয়েছেন, সঙ্গে ৮ রান খরচায় ভারতের শেষ ৩ উইকেটও ঝুলিতে পুড়েছেন। এছাড়া আল ফাহাদ দুটি ও মারুফ মৃধা এবং রিজান হোসেন একটি করে উইকেট নেন। তাতেই ভারত গুটিয়ে যায় ১৩৯ রানে।
আজিজুল হাকিম তামিমের নেতৃত্বে দলটি এক হয়ে লড়াই করেছে, আর প্রতিটি বোলারের গতি, প্রতিটি ক্যাচ যেন সেই অগ্নিসাক্ষী। প্রতিটি উইকেট ছিল উৎসবের মুহূর্ত, প্রতিটি রান ছিল সংগ্রামের চিহ্ন। তারা শিরোপা অর্জন করেছে বোলিংয়ের ঝলকে, যে ঝলককে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দীর্ঘদিন মনে রাখা হবে। এটি কেবল একটি শিরোপা নয়, এটি ছিল আত্মবিশ্বাসের জয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন এক দিগন্তের সূচনা।
Leave a Reply