রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তায় বাসে উঠলেই হেলপারদের কিছু শব্দ বলতে শোনা যায়। এই শব্দগুলোর সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। বিশেষ করে যারা নিয়মিত বাসে উঠেন তারা এই শব্দগুলো শুনে থাকেন। বাসের হেলপাররা ওস্তাদ বামে ‘প্লাস্টিক, ইঁদুর কিংবা ব্রয়লার’ শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকেন। হেলপাররা কেন এই শব্দগুলো বলে থাকেন তা জানতে রাজধানীর কয়েকটি বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের।
রাজধানীবাসীর সবথেকে আতঙ্ক ও ভোগান্তির নাম যানজট। ব্যস্ত নগরীতে ১০ মিনিটের রাস্তা যেতেই পরিস্থিতি ভেদে ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। এর মূল কারণ যানজট। আর এই যানজটের মূল কারণ ধরা হয়, রাস্তায় উপরে অস্থায়ী দোকান, ট্র্যাফিক আইন অমান্য করে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা, পাবলিক পরিবহনের চেয়ে প্রাইভেট গাড়ির আধিক্য। এছাড়া অনেকেই বাস চালকদের ইচ্ছেমতো যাত্রী ওঠানামাকে দায়ী করেন। তবে বাস চালকরা এই কথা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, রাস্তায় প্রাইভেট কার ও বাইক চালকদের জন্য যানজট সৃষ্টি হয়। বাইক চালকরা একটু সুযোগ পেলেই আইন অমান্য করে গাড়ি টান দেয়। এতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। একই ঘটনা প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রেও।
রাজধানীর বসিলা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত পরিস্থান বাসে নিয়মিত হেলপারের দায়িত্ব পালন করেন মো. সুমন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এই পেশার সঙ্গে জড়িত। এই বাসে হেলপারের দায়িত্ব পালনের আগে তিনি অন্য বাসেও একই কাজ করেছেন। এজন্য তার অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের। তার কাছে ওস্তাদ ‘বামে প্লাস্টিক’ কথাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমরা এই শব্দটি ব্যবহার করি। বামে প্লাস্টিক বললেই ড্রাইভার বুঝতে পারেন বাসের বাঁ দিকে প্রাইভেট কার আছে। তখন ড্রাইভার বাঁ দিকে বাস না চাপিয়ে এগিয়ে যান। এর পাশাপাশি আরও একটি কারণের কথা জানান এই হেলপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাসের সঙ্গে প্রাইভেট কারের একটু ধাক্কা লাগলেই দেখবেন কার দুমড়ে-মুচড়ে যায়। যা দেখতে এক রকম প্লাস্টিকের মত দেখায়। তাই প্রাইভেট কারকে প্লাস্টিক বলা হয়। এছাড়াও প্রাইভেট কার বলতে অনেক সময় লাগে, কিন্তু প্লাস্টিক বলতে তেমন সময় লাগে না। ‘প্রাইভেট কার’কে প্লাস্টিক বলার এটিও একটি কারণ বলে জানালেন এই হেলপার।
পরিস্তান বাসে দীর্ঘদিন ধরেই ড্রাইভারের দায়িত্ব পালন করছেন রসিদ মিয়া। রাস্তায় বের হলেই তিনি নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়িতে ফিরেন। প্রতিনিয়ত যাত্রী কিংবা বাইক-প্রাইভেট কার চালকদের সঙ্গে তার তর্কযুদ্ধ হয়। যার বেশিরভাগই ঘটে রাস্তায়। রাজধানীতে সাইড দেওয়া কিংবা গাড়িতে লেগে যাওয়ার কারণে হরহামেশাই বাস চালক ও হেলপারের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের চালক কিংবা যাত্রীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি দৃশ্য দেখা যায়।
তার কাছে ওস্তাদ ‘বামে ব্রয়লার কিংবা ইঁদুর’ শব্দগুলোর অর্থ জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এগুলো সাংকেতিক অর্থে আমরা ব্যবহার করে থাকি। রাস্তায় বাইক চালকরা যেভাবে গাড়ি চালায় তাতে দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা খুবই বেশি থাকে। কারণ একটু জায়গা পেলেই তারা বাইক টান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে অনেক সময় বাইকসহ চালকরা বাসের নিচে পড়ে যান। তখন দোষ হয় বাস চালকদের। কিন্তু এর জন্য তো আমরা দায়ী নই। তাই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে হেলপাররা বাইক চালকদের ‘ব্রয়লার বা ইঁদুর বলে থাকে। তবে ইঁদুর শব্দটি বেশি ব্যবহার করা হয়। ইঁদুর বললেই আমি বুঝতে পারি সামনে, বামে কিংবা পিছনে মোটরসাইকেল আছে। তখন আমি সেভাবেই বাস চালাই।
এসব শব্দের পাশাপাশি আর কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন: ‘টিপ’, ‘ডবল’ ও পোকা। এই তিনটি শব্দ দ্বারা হেলপাররা তিনটি অর্থ বুঝিয়ে থাকেন। টিপ মানে গুড়াগাড়া যানবাহন; যেমন— বাইক, ঠ্যালাগাড়ি ইত্যাদি। আর ডবল হলো— প্রাইভেট কার, তবে একটি নয় একাধিক।
এছাড়াও পোকা শব্দটি ব্যবহার করে যাত্রীকে বোঝানো হয়। হেলপাররা পোকা বললেই চালক বুঝতে পারেন সামনে বা পিছনে যাত্রী আছেন। সেই অনুযায়ী বাসের চালক যাত্রীকে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন।
Leave a Reply