1. news@impactnewsbd.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

বায়ুদূষণ রোধে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯৩ বার

‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু’ কথাটি রূপকার্থক। এর মধ্যে বায়ুদূষণের আক্ষরিক অর্থ অনুসন্ধান নিরর্থক। কিন্তু আজকের দিনে ঢাকায় বসে যদি রবীন্দ্রনাথ বাতাসে বিষ ছড়ানো কোনো প্রসঙ্গের অবতারণা করতেন, তাহলে নির্ঘাত তাতে বায়ুদূষণের আক্ষরিক অর্থসূচক দ্যোতনা থাকত। কারণ, ঢাকায় এখন আক্ষরিক অর্থেই কুবাতাস বহমান।

প্রাত্যহিক ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন বলছে, গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বের ১২০টি শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল চতুর্থ। প্রতিষ্ঠানটির বায়ুদূষণ স্কেলে ঢাকার স্কোর ছিল ২৩৪। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এই মান অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ।

সুবাতাস হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) যে সর্বাধিক সহনসীমা স্থির করেছে, ঢাকার বাসিন্দারা তা থেকে স্পষ্টতই বঞ্চিত। ওই মাণদণ্ডানুযায়ী, রাজধানীবাসী তীব্র দূষণের শিকার। গতকাল রাজধানীতে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি ছিল।

এ অবস্থা রাজধানীর জন্য নতুন কিছু নয়। এখানকার বাসিন্দারা যেন এই বাস্তবতাকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন। অথচ বাতাসে বস্তুকণা এবং বিবিধ রাসায়নিকের আধিক্য কীভাবে ফুসফুস তথা শরীরের বিপুল ক্ষতিসাধন করে, বিবিধ মারাত্মক ব্যাধির প্রকোপ বাড়ায়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে, তার বহু তথ্য বহু প্রতিবেদনে প্রকাশিত হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। এই মর্মান্তিক সত্যও আজ আর কারও অজানা নয়—বায়ুদূষণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুদের স্বাস্থ্য।

ঢাকার চতুষ্পার্শ্বস্থ অননুমোদিত অগুনতি ইটের ভাটা ও মহানগরের অভ্যন্তরস্থ বিপুলসংখ্যক ফিটনেসবিহীন যানের কৃষ্ণ ধোঁয়ার নিরন্তর উদ্‌গিরণ এবং যথেচ্ছ উপায়ে চলমান নির্মাণকাজের বদৌলতে বাতাসে ছড়ানো ধূলিকণা এই দূষণের তিন প্রধান উৎস। এই উৎস ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে।

অননুমোদিত ইটভাটা বন্ধ করা গেলে, ফিটনেসবিহীন যানের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবং অপরিকল্পিত উপায়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করা গেলে ঢাকার বাতাসের বিষের প্রধান উৎসমুখ বন্ধ করা সম্ভব হবে। এর বাইরে ঢাকার ভেতরে উন্মুক্ত স্থানে আবর্জনা ফেলা এবং নানা জায়গায় পলিথিন ও শুকনো পাতা পোড়ানো বন্ধ করাও অতি জরুরি। রাজপথে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পানি ছিটানোও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট ফলদায়ী।

এখন মোটাদাগে শীতকাল। সামগ্রিক আবহ বৃষ্টিহীন। প্রাকৃতিক শুষ্কতা বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষ বিভিন্ন পার্কে বা রাস্তার পাশে কাগজ পুড়িয়ে গা গরম করবেন। সেই ধোঁয়া মিশে বাতাসকে আরও ভারী করে তুলবে।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সবাই সমস্যাটির কারণ জানেন, সমাধানের পথও জানেন। তবু সমাধান হয় না।

তাই সহজে বোধগম্য, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অভাব তথ্য বা জ্ঞানের নয়; অভাবটি চেতনার। তার স্পষ্ট প্রমাণ—বিপুল প্রচার অভিযানে কথাসরিৎসাগর রচিত হচ্ছে, পরিবেশসংক্রান্ত সেমিনারে আলোচকদের চিৎকারে ঊর্ধ্বলোক অবধি প্রকম্পিত হচ্ছে, কিন্তু বায়ুদূষণ কমছে না।

প্রবল দূষণাসুরের সামনে ঢাকার বায়ু আক্ষরিক অর্থেই অনাথ হয়ে আছে। কুখ্যাত দূষণ প্রাবল্যে একটি বিপুল জনগোষ্ঠী অতি নীরবে বিবিধ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে, অথচ আরোগ্যের অনিবার্য উপায় অবলম্বনের লেশমাত্র দৃশ্যমান নয়। কর্তৃপক্ষ যথাবিহিত আপন স্বভাবে সুস্থিত থেকে গজেন্দ্রগমনে পরিতৃপ্ত।

তবে বায়ুদূষণের সংকট যে মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছে, তাতে এখনই তার রাশ টানা না গেলে বিপর্যয় অনিবার্য।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© 2024, All rights reserved.
Design By Raytahost